বিশ্ব বিখ্যাত যাদুকরদের জীবনী

যাদু সম্রাট পিসি সরকারর জীবনী

জাদুর আদি উৎস অনেক প্রাচীন। আদি নাম ইন্দ্রজাল। শব্দটি এসেছে স্বর্গের দেবতা ইন্দ্র থেকে। তিনি অসুর দমনের জন্য মায়ার জাল বিস্তার করতেন। এই মায়াবিদ্যাকেই সেকালে ইন্দ্রজাল, কুহক, সম্মোহন, মোহিনীবিদ্যা, সংবদন, হস্তলাঘব কলা, কার্মণ্য যতু (জাদু) ইত্যাদি বলা হতো। ইংরেজির ম্যাজিক, হিপনোটিজম এবং মেসমেরিজমও একই ব্যাপার। তবে আজ জাদু বিদ্যা একটি উচ্চাঙ্গের শিল্পকলা ও জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম।
বাংলাদেশেও জাদুবিদ্যার ইতিহাস অতি প্রাচীন। সেই তখন থেকে আজ পর্যন্ত জাদুর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে কজন সেরা জাদুকরের নাম করা যাবে, তাদের মধ্যে যিনি সর্বশীর্ষে, তার নাম জাদুসম্রাট প্রতুলচন্দ্র সরকার, যিনি বিশ্বের কোটি কোটি জাদুপ্রিয় মানুষের কাছে পি. সি. সরকার নামেই সমধিক পরিচিত। জাদুর ইতিহাস যিনি এক কিংবদন্তি পুরুষ।
সারাবিশ্বে শুধু জাদুর খেলা দেখিয়েই তিনি গোটা বাঙালি জাতির জন্য কুড়িয়ে এনেছেন অনেক সুনাম আর গৌরব। শুধু বাংলাদেশ বা ভারত উপমহাদেশ নয়, পৃথিবীরও বোধ হয় এমন দেশ নেই, যেখানকার শিক্ষিত মানুষেরা জাদুকর পি. সি. সরকারের নাম জানেন না।
কৃতিপুরুষ পি. সি. সরকারে জš§ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯১৩ সালে। বাবার নাম ভগবানচন্দ্র সরকার এবং মায়ের নাম কুসুমকাহিনী দেবী।
প্রতুল ছিলেন বাবা মায়ের বড় ছেলে। তারা ছিলেন দুই ভাই। তার আরেক ভাই অতুল সরকারও পরে জাদুবিদ্যায় সুনাম অর্জন করছিলেন।
টাঙ্গইলের শিবনাথ হাইস্কুলে শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। বাল্যকাল থেকেই জাদুখেলার প্রতি নেশা ছিল প্রতুলের। তাদের পরিবারে আগে থেকেই অনেক জাদুখেলা দেখাতেন। সেই বংশগত ঐতিহ্যই তার ওপর বেশী প্রভাব ফেলেছিল।
তিনি যখন সপ্তম/অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র, তখন থেকে মজার মজার জাদুর খেলা দেখিয়ে সবাইকে অবাক করে দিতেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি পাঠ্যপুস্তুকের পাশাপাশি জাদুর বইও পড়তে শুরু করেন। স্কুলের লাইব্রেরিতে জাদু শেখার ওপর যত বই ছিল, সব পড়ে শেষ করেন প্রতুল।
প্রথম শ্রেণীতে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি এসে ভর্তি হন করটিয়া সাদত কলেজে। তখন কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন বিখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদ ইব্রাহিম খাঁ।
কলেজে এসেও চলল জাদুর ওপর পড়াশোনা আর ম্যাজিকের চর্চা। সারা কলেজে তখন তার প্রচুর নাম ডাক। চায়ের দোকানে, খেলার মাঠে সকলের মুখে মুখে প্রতুলের অদ্ভুত জাদুর খেলার প্রশংসা।
এমন সময় একদিন সাদত কলেজ পরিদর্শন করতে এলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সপেক্টর ড. হরেন মুখার্জি এবং তার সঙ্গে এলেন কোলকাতার আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মি. হার্লে। তাদের আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়, প্রতুলের জাদু প্রদর্শনীর। প্রতুল অনুষ্ঠানে এমন সব চমৎকার জাদুখেলা দেখালেন যে, তারা দুজনেই খুবই মুগ্ধ হয়ে গেলেন।
কলেজে এসেই তিনি নিজের নাম একটু পরিবর্তন করে রেখেছিলেন পি. সি. সোরকার। সোরকার একটি ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ জাদুকর। তিনি নিজের পদবি সরকার বাদ দিয়ে সোরকার করেছিলেন বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ব্যাপক প্রচার লাভের জন্য। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই পি. সি সোরকার নামই ছিল তার। তারার যখন বিশ্বব্যাপী খ্যাতিন হয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন, তখন ফিরে গিয়েছিলেন নিজের পদবিতে পি. সি. সরকার। এখনো তিনি এই নামেই পরিচিত।
তিনি ১৯২৯ সালে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাশ করেন এবং করটিয়া সাদত কলেজে ভর্তি হন।
করটিয়া কলেজে পড়ার সময়ে তিনি হিপ্লোটিজম নামে একটি বইও লিখেছিলেন। তখনকার করটিয়া কলেজ ছিল ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। তাই ১৯৩১ সালে আইএ পাস করে ডিগ্রী পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে এসে। এই কলেজ থেকে তিনি অংকে অনার্স নিয়ে বিএ পরীক্ষা দেন।
আনন্দমোহন কলেজে পড়ার সময় তিনি ম্যাজিক শিক্ষা নামে আরও একটি বই লেখেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি জাশুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে তার নাম ডাক এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি হলে অথবা কোথাও ম্যাজিক দেখাচ্ছেন শুনলেই দেখতে দেখতে প্রচুর দর্শক জড়ো হয়ে যেত।
১৯৩৭ সালে ২৪ বছর বয়সে তিনি সর্বপ্রথম জাপানে যান। সেখানে তিনি জাদুর খেলা দেখিয়ে প্রচুর সুনাম ও অর্থ উপার্জন করেন।
জাদুকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার পর তিনি চলে যান বড় শহরের বৃহত্তর ক্ষেত্রে। কারণ গ্রামে পড়ে থাকলে তার পসার জমবে না। তাই তিনি কোলকাতায় পাড়ি জমান। প্রথমে ওঠেন তিনি ভাড়া বাড়িতে। পরে নিজেই বাড়ি করেন কোলকাতার বালিগঞ্জে।
অল্পদিনের মধ্যেই কোলকাতা শহরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি নিয়মিত জাদুর অনুষ্ঠান করতে লাগলেন, আর সেই সঙ্গে পত্রপত্রিকাতেও শুরু করলেন জাদু বিষয়ে লেখালেখি। দুদিকেই তার খ্যাতি বাড়তে লাগল।
তার জাদু নিয়ে মাঝে মধ্যে মজার মজার সব কাণ্ডও ঘটত। একবার খুবই মজার একটা কাণ্ড হয়েছিল অবিভক্ত বাংলাদেশের মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের সময়ে। মন্ত্রিসভার এক নৈশ ভোজসভায় আয়োজন করা হয়েছিল পি. সি. সরকারের জাদুখেলার। এই অনুষ্ঠানে পি. সি. সরকার যে জাদুটি দেখিয়েছিলেন, তার শিরোনাম ছিল বাংলার মন্ত্রিমণ্ডীর পদত্যাগ।
খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোলকাতার ইম্পেরিয়াল রেষ্টুরেন্টে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হকের হাতে এক টুকরো সাদা কাগজ দিয়ে কিছু লিখতে বললেন।
হক সাহেব তার কথা মতো কিছু লিখেলেন। তারপর তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা সেই লেখার নিচে স্বাক্ষর করলেন। এবং স্বাক্ষরিত পত্রটি তিনি পড়তে দিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুলিশ কমিশনার মি. কলসনের হাতে। তিনি পড়তে লাগলেন: আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সকলে এই মুহূর্তে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করিলাম এবং আজ হইতে জাদুকর পি. সি. সরকার বাংলার মুখ্যমন্ত্রি হইলেন।
সবাই বিস্ময়ে হতবাক। শেরে বাংলা অবাক হয়ে বললেন যে তিনি তো এমন কোন কথাই কাগজে লেখেনি। মন্ত্রিরাও বললেন তারাও যে কাগজে সই করেছেন, তাতে এমন কোন কথা ছিল না। তাহলে এমন হলো কেমন করে। এ রকমই ছিল পি. সি. সরকারের খেলা। এটা ছিল ফোর্স রাইটিং (ঋড়ৎপব ৎিরঃরহম) এর জাদু।
পরের দিনের পত্রপত্রিকায় এই রসিকতাপুর্ণ উচ্চমানের জাদুখেলার খবরটি চাপা হয়েছিল বেশ ফলাও করে।
১৯৩৭ সাল। ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রাম তখন তুঙ্গে। এই সংগ্রামের পুর্ণ সহযোগিতা করেছিলেন পি. সি. সরকার নিজেও। স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নায়ক রাজবিহারী বসু তখন জাপানে। সেখানেই তিনি ডেকে পাঠালেন পি. সি. সরকারকে। সেই ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়ে পি. সি. সরকারও রওনা হয়ে যান জাপানের পথে। কিন্তু বার্মায় এসেই তার খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেল। কিন্তু তিনি দমলেন না। খালি হাতেই গিয়ে পৌছালেন রাসবিহারী বসুর ওখানে।
এরপর খালি হাতেই তিনি খেলা দেখাতে শুরু করলেন। বলতে গেলে জাপানের মানুষ যেন পাগল হয়ে গেল তার খেলা দখার জন্য। যেখানেই তিনি যান, সেখানেই হাজার হাজার লোকের ভিড়। ফলে টিকিট বিক্রি থেকে প্রচুর টাকা আসতে লাগল হাতে। এইভাবে অর্জিত সব টাকাই তিনি দান করে ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বার্থে।
এইভাবে জাদুর খেলা দেখিয়ে তিনি ঘুরে বেড়ালেন সারা ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া এবং জাপান থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় সকল দেশ। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই, যেখানে তার জাদুর খেলা প্রদর্শিত হয়নি এবং যেখানেই গেছেন তিনি সেখানেই পেয়েছেন প্রাণঢালা সংবর্ধনা। তার নাম শুনলেনই হাজার হাজার লোক এসে ভেঙে পড়েছে হলে।
তিনি লাভ করেছেন বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার। স্টেজ ম্যাজিকের জন্য আমেরিকার জাদুবিদ্যার নোবেল প্রাইজ বলে খ্যাত স্ফিংস পুরস্কার পেয়েছেন যেমন তিন। তেমনি পেয়েছেন জাদুকরদের সবচেয়ে বড় জার্মান পুরস্কার সোনার লরেল মাল্য। হল্যাণ্ড থেকে দুবার পেয়েছেন ট্রিকস্ পুরস্কার।
এছাড়া ইংল্যাণ্ডের বিবিসি টেলিভিশন, অস্ট্রেলিয়া টেলিভিশন, শিকাগোর ডব্লিউ জি এ টেলিভিশনে বহুবার তার জাদুখেলা প্রদর্শিত হয়েছে।
তার জাদুখেলার কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ মায়ানমারের (বার্মা) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকিন নু তাকে অভিহিত করেছিলেন এশিয়ার গৌরব বলে।
১৯৬৪ সালে ভারত সরকার তাকে সম্মানসূচক পদ্মশ্রী উপাধি প্রদান করে। রাশিয়ার জাদুকররা তাকে মেনে নিয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাদুকর বলে।
তিনি ছিলেন ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ড, জার্মানী, বেলজিয়াম এবং জাপানে ম্যাজিশিয়ান সমিতির অন্যতম সদস্য। আমেরিকার আর্ন্তজাতিক জাদুকর ভ্রাতৃ সংস্থার কোলকাতা শাখার নামকরণ হয়েছে তারই নামে। এছাড়া তিনি দেশে যে কত সরকারি বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার পেয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই।
১৯৫৭ সালে পি. সি. সরকার লন্ডনের বিবিসি টেলিভিশনে করাত দিয়ে এক তরুণীকে কেটে দু টুকরো করে দেখিয়ে ছিলেন। এতে বহু টেলিভিশন দর্শক অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরের দিন লণ্ডনের বড় বড় পত্রিকা এই লোমহর্ষক ও বিস্ময়কর খেলার খবরের সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করে।
এই বিস্মরকর খেলা দেখানোর পরপরই ১৯৫৭ সালের ২২ মে পি. সি. সরকারকে আমেরিকা টিভি কোম্পানিগুলো বিশেষ বিমানে করে নিয়ে যায় তাদের দেশে।
১৯৬৭ সালে তিনি আবার আমেরিকায় যাওয়ার আমন্ত্রণ লাভ করেন।
এই সময় তিনি আর্ন্তজাতিক রোটারি ক্লাবের সদস্য এবং বিলেতের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন ফেলো নির্বাচিত হন।
জাদুবিদ্যার ওপর তিনি অনেকগুলো বইও লিখেছেন। ১৯৬৮ সাল নাগাদ ইংরেজি, বাংলা, ও হিন্দি ভাষা মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মোট ২০টি।
জাদুসম্রাট পি. সি. সরকারের পারিবারিক জীবন ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল ও শান্তিময়। ১৯৩৮ সালে তিনি টাঙ্গাইলের নামি চিকিৎসক প্রমথনাথ গুহ মজুমদারের প্রথম কন্যা বাসন্তী দেবীকে বিয়ে করেন। বাসন্তী দেবী ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিনী। পি. সি. সরকার যখন তার জাদুর খেলা নিয়ে মগ্ন থাকতেন ঘরের বাইরে কিংবা বিদেশে তখন লক্ষ¥ীর মতো সংসার সামাল দিতেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী।
পি. সি. সরকারের দুই মেয়ে এবং তিন ছেলে। বড় ছেলে প্রফুল্লচন্দ্র সরকার ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার। মেজছেলে অ্যাপ্লাইড সাইকোলজিতে মাষ্টারস করে বর্তমানে পিতার পেশায় নিয়োজত। তিনি বর্তমানে জুনিয়র পি. সি. সরকার নামে খ্যাত। ছোট ছেলে কমার্শিয়াল পাইলট।
পি. সি. সরকারের বেশ কয়েকটি বাড়ি আছে। বালিগঞ্জে দুটো। রাসবিহারী অ্যাভেনিউতেও আছে বিশাল একটি বাড়ি। নাম ইন্দ্রজাল। ফার্ন রোর্ডে আছে আরেকটি বড় বাড়ি। নাম জাদুমহল। আর বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের বাড়ির নাম ছিল জাদুভবন।
তার জাদুবিদ্যা নিয়ে রঙিন চলচ্চিত্রও তৈরি হযেছে। হিস মাষ্টারস ভয়েস বের করেছে একটি লংপ্লেয়িং রেকর্ড। তার সম্পর্কে দেশে ও বিদেশে বই বের হয়েছে ২০টির মতো। জাদু সম্রাট তার স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন : আগামী ১৯৭০ সালে ওসাকাতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বমেলা। এশিয়াতে আজ পর্যন্ত বিশ্বমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই সর্বপ্রথম হবে। আমরা ইতিমধ্যে ইন্দ্রজাল প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছি অর্থাৎ দশমবার জাপাান আসার ব্যবস্থা হয়েই রয়েছে। আবার কত কি নতুন দেখাব। আবার জাপান কি রূপে দেখা দেবে কে জানে।
আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি দলবল নিয়ে জাপানে এলেন। কিন্তু তার আর ফিরে যাওয়া হলো না। এই জাপানেই ১৯৭১ সালের ৬ জানুয়ারি তাবেৎসু (সাপোরো) শহরে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগকরেন।
জাদুসম্রাট পি. সি. সরকারের একটি বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি জাদু দেখানোর সময় পরিধান করতেন ভারতীয় রাজা মহারাজাদের পোশাক। দর্শকদের মধ্যে চমক সৃষ্টি করার জন্যই তিনি এমনটা করতেন।
তার এই রাজকীয় পোশাক নিয়ে একবার এক মজার কাণ্ডও ঘটেছিল। জনৈক ব্রিটিশ জাদুকর তাকে ইচ্ছেকৃতভাবে অপমান করার জন্য বলেছিলেন Why you wear Princely costume? You are not of Royal birth.
পি. সি. সরকার মৃদু হেসে বলেছিলেন : Am I not the Prince of Magic?
কিন্তু বিশ্ববাসী স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি শুধু জাদুর রাজপুত্র নন, ছিলেন জাদুর সম্রাট। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সম্রাট।

 

যাদুকর পিসি সরকারের কিছু দূর্লভ ছবি

 
 

বাংলাদেশের গৌরব জুয়েল আইচ

বাংলাদেশের গৌরব জুয়েল আইচ

জাদুকে যিনি বিনোদন থেকে শিল্পের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি আর কেউ নন, জাদুকর জুয়েল আইচ। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচিতি দিয়েছেন এই জাদুকর। তিনি শুধু জাদুশিল্পীই নন; একাধারে বংশীবাদক, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবীও বটে। তার আরেকটি পরিচয় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। বরিশালে জন্ম হলেও ছেলেবেলা কেটেছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সমদেকাঠি গ্রামে। সেই সুবাদে সমদেকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পিরোজপুর সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং স্থানীয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও শিক্ষকতার সুবাদে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট থেকে বিএড কোর্স সমাপ্ত করেন। খুব ছোটবেলা বাড়িতে বেদেবহর এসেছিল, তাদের কাছেই প্রথম জাদু দেখে ভালো লেগে যায় জুয়েল আইচের। সেই ভালো লাগা ভালোবাসায় পরিণত হয় বানারীপাড়া সার্কাস দলের এক জাদুকরের গলা কাটার জাদু দেখে। আর এই ভালোবাসাটা উন্মাদনায় পরিণত হয় সিরাজগঞ্জের জাদুকর আবদুর রশিদের জাদু দেখে, আর কবি বন্দে আলী মিয়ার রূপকথা পড়ে। সেই থেকেই একটু একটু করে জাদু রপ্ত করতেন নানার কাছে। তার বিখ্যাত জাদু কাগজ থেকে ডলার বানানো, চোখ বেঁধে গাড়ি চালানো, কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া লাগানো ইত্যাদি। মঞ্চে প্রথম তার জাদু প্রদর্শন করেন ১৯৭২ সালে। এ ছাড়া মিডিয়ায় প্রথম জাদু প্রদর্শন করেন ১৯৭৯ সালে। মূলত ভালোলাগা থেকেই জাদু চর্চা করা। কিন্তু একটা সময় তিনি জাদুবিদ্যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেন। তার ইচ্ছা ছিল যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে সম্মানের আসনে বসাতেই হবে। সেই থেকেই জোরেশোরে জাদুর চর্চা শুরু। আমাদের জাদুর হাজার বছরের ঐতিহ্যের ইতিহাস তার জানা। বহিঃবিশ্বে দেশের মাথা উঁচু করার হাতিয়ার হিসেবে নিজের জাদুচর্চাকেই বেছে নেন তিনি। এরপরের ইতিহাস কেবল সামনে চলার। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই গুণী শিল্পী বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা জাতীয় পুরস্কার বেস্ট ম্যাজিশিয়ান অব দ্য ইয়ার। সোসাইটি অব আমেরিকান ম্যাজিশিয়ান ১৯৮১ সালে তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে পুরস্কৃত হন তিনি।

মৃত পাখি জীবিত করেন ক্রিস অ্যানজেল

 ক্রিস্টোফার নিকোলাস কে চেনেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে অনেকেই থাকতে পারেন। কিন্তু ক্রিস অ্যানজেলকে চেনেন না এমন মানুষ খুব বেশি নেই। মজার বিষয় হলো ক্রিস্টোফার নিকোলাস এবং ক্রিস অ্যানজেল একই ব্যক্তি। তার জাদু বিষয়ক টেলিভিশন শো ‘ক্রিস অ্যানজেল : মাইন্ড ফ্রিক’ জনপ্রিয়তা পায় গোটা বিশ্বজুড়ে। অনুষ্ঠানটির ছয়টি সিজন প্রচারিত হয়েছে। ২০০৫ সালে ‘এ অ্যান্ড ই’ নেটওয়ার্কে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি চলে ২০১০ সাল পর্যন্ত। নিত্য নতুন চমকপ্রদ সব জাদু উপহার দিয়ে ক্রিস অ্যানজেল পান বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ম্যাজিক ক্যাসেল হলিউড তাকে তিনবার বর্ষসেরা ম্যাজিশিয়ান খেতাবে ভূষিত করে। এ ছাড়াও বিখ্যাত কানাডিয়ান কোম্পানি ‘চিরক দ্য সুলেল’ এর সঙ্গে দশ বছরের চুক্তি করেছেন। জাদু দেখানোর খেলায় তিনি হঠাৎ আকাশে উড়েছেন, পানির ওপর দিয়ে হেঁটে পার হয়েছেন সুইমিং পুল, রাস্তায় পড়ে থাকা গলা কাটা মৃত পাখিকে দান করেছেন জীবন। পাখি এবং মাথার ধর জোড়া লাগিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন আকাশে। এমন বহু সংখ্যক জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। ক্রিস অ্যানজেলের আরও একটি টেলিভিশন শো বিখ্যাত। নাম ছিল ‘ক্রিস অ্যানজেল : বিলিভ’।

আধুনিক জাদুর জনক রবার্ট হুডিনি

রবার্ট হুডিনিকে বলা হয় আধুনিক জাদু শিল্পের জনক। ১৯ শতকের অন্যতম বিখ্যাত জাদুশিল্পী ছিলেন হুডিনি। রবার্ট হুডিনি পরবর্তীতে অনেক জাদুশিল্পীর আদর্শ হিসেবে গণ্য হন। রবার্ট হুডিনির বিখ্যাত জাদুগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘সেকন্ড সাইট’। তার আরেকটি বিখ্যাত জাদু হচ্ছে ‘গ্লাস অব ওয়াটার’। এখানে দেখা যায় তিনি একটি গ্লাসে কিছু তরল রেখে সামনে উপস্থিত দর্মকদের তরলটি সম্পর্কে চিন্তা করতে বলতেন। যে যেই তরলটি সম্পর্কেই বলত না কেন দেখা যেত সেটিই আছে গ্লাসের ভিতর। আরও একটি জাদু হলো তার শূন্যে ভেসে থাকা। এ রকম জাদু দেখিয়ে অনেকেই বেশ নাম কামান। তবে রবার্ট হুডিনি অবশ্য রবার্টের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম ছিল। তিনি মাটির সমান্তরালে একটি লাঠি স্পর্শ করে শুয়ে থাকতেন। দেখে যে কেউ মনে করতেন তিনি শূন্যে ভেসে ঘুমাচ্ছেন। এরকম বহু জাদু বিখ্যাত হয়েছে রবার্ট হুডিনির। এসবের মধ্যে লাইট অ্যান্ড হেভি চেস্ট, মারভেলাস অরেনজ ট্রি, দ্য ইথারিয়েল সাসপেনসান ইত্যাদি রয়েছে। রবার্ট হুডিনির বাড়িটি পরবর্তীতে জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাড়িটির সামনে রবার্ট হুডিনির একটি মূর্তি রয়েছে।

পুলিশকে চ্যালেঞ্জ হুডিনির

বিখ্যাত জাদুকর হ্যারি হুডিনির নাম শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যেভাবেই আটকে রাখা হোক তাকে, দড়ি কিংবা শিকল দিয়ে, ঠিক তা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পালিয়ে যেতই সে। আর এটাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে হুডিনির সবচেয়ে বড় জাদুর কৌশল। একবার এক পুলিশকেই চ্যালেঞ্জ করেন হুডিনি। পুলিশ তাকে হাতকড়া পরায় আর সেখান থেকেও নিজেকে ছাড়িয়ে নেন হুডিনি। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে হুডিনির নাম। ১৯০৪ সালে নেওয়া বিখ্যাত এই জাদুকরের বিশেষ হাতকড়া থেকে মুক্তির চ্যালেঞ্জ, দম না নিয়ে সর্বোচ্চ সময় থাকার চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন কাজ পৃথিবী বিখ্যাত। খুব ছোট বেলাতেই প্রথম নিজের উধাও হওয়ার খেলা দেখান হুডিনি। এক্কেবারে উধাও হয়ে যান ১২ বছর বয়সে। চড়ে বসেন এক মালবাহী গাড়িতে। পাড়ি দেন শত শত মাইল আর হয়ে যান অনেকদিনের জন্য হাওয়া। পালিয়ে থাকার এই সময়টা তার কীভাবে কেটেছিল সেটা জানা না গেলেও এতটুকু জানা যায়  যে, ওই সময়টা কানসাসে কাটিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে নিউইয়র্কে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন হুডিনি আর সাহায্য করতে শুরু করেন তাদের। এক চিত্রগ্রাহকের সহকারীসহ আরও কিছু ছোটখাটো কাজ করতে থাকেন তিনি। রবার্ট হুডিনি বেশ বড় জাদুকর ছিলেন তখন। তার পথ অনুসরণ করেই নিজের নাম হ্যারি হুডিনি করে ফেলেন হুডিনি আর ঢুকে পড়েন জাদুর জগতে।

চীনের দেয়াল ভেদ করেন ডেভিড কপারফিল্ড

হিসেবে ডেভিড কপারফিল্ড নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়। বিশ্বজুড়ে রয়েছে কপারফিল্ডের কোটি কোটি ভক্ত। তার জাদু মুগ্ধ করে সবাইকে। সব জাদুর মধ্যে কিন্তু একটা ট্রিক্স থাকে। কিন্তু এই জাদুকরের এর ট্রিক্স এর ক্ষেত্রে কেউই সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। এজন্যই কপারফিল্ড বিশ্বজুড়ে সবার আগ্রহে পরিণত হন। তার বিখ্যাত জাদুর খেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চীনের দেয়াল ভেদ করা। যা অকল্পনীয় একটি ব্যাপার। সরাসরি নিজের চোখকে বিশ্বাস করাই কষ্টকর। আরও একটা আছে যা ‘ডেভিড কপারফিল্ড ডেথ স্য’ নামে বিখ্যাত। এটি দেখে সাধারণ মানুষও হার্টফেল করতে পারে। এখানে একটি ইলেক্ট্রিক করাত ব্যবহার করে নিজেকে দুই ভাগ করে পেরে কপারপিল্ড এবং আবার নিজেকে জোড়া দেন। সবার চোখের সামনে এ কাজ করেন কপারফিল্ড। আরও মজার মজার জাদু আছে তার যেখানে ডেভিড কপারফিন্ড উড়ে বেড়ায়, মাঝে একজন দর্শককেও সঙ্গে নেয়। একবার একটি ট্রেন ঢেকে দেওয়া হলো বিশাল কাপড় দিয়ে। উত্সুক জনতা অপেক্ষা করছে।

এরপর কী হবে? ডেভিড কপারফিল্ড বলছেন গোটা ট্রেনটাই নাকি হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাবে। সত্যিই তাই হলো। ট্রেনটি মুহূর্তেই হারিয়ে গেল দৃশ্যমান পৃথিবী থেকে। যা সত্যিই বিস্ময়কর।

জাদুর প্রতি জীবনের শুরুতেই তার ভিতর আগ্রহ তৈরি হয়। সেটা তার দাদার সঙ্গে থেকে। তার দাদা একবার ডেভিডকে তাসের কার্ড দিয়ে জাদু দেখাছিলেন। তখন ডেভিডের বয়স মাত্র সাত। সে সময় দাদার এ জাদু তার ভিতরটা নাড়া দেয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো তিনি যখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ঠিক তার আগেই তার দাদা পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তাই তার জাদুর সব কৃতিত্ব দাদাকে উৎসর্গ করে দেন ডেবিড কপারফিল্ড। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত অসহায়ত্বের মধ্যে কেটেছে ডেভিডের জীবন। মূলত সামাজিকভাবে নিজেকে উপরের সারিতে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ডেভিড জাদুশিল্পে মনোনিবেশ করেন। তিনি যখন জাদু শিখছিলেন এবং মানুষকে দেখানো শুরু করলেন ঠিক সে মুহূর্ত থেকেই সবাই তাকে আলাদা চোখে চিনতে শুরু করে। বিষয়টা ডেভিডকে অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয়। অনেকেই মনে করেন তিনি ডাকিনি চর্চা (ভুডো) কিংবা কিছু একটা করেন যার সহায়তায় এসব কিছু হয়। তাদের দাবি ডেভিড কপারপিল্ডের ভিতর নিশ্চয়ই অলৌকিক কিছু একটা আছে যা ডেভিড কখনই প্রকাশ করেননি।

ডেভিড ব্লেইনের ডাইভ অব ডেথ

নাম ডেভিড ব্লেইন। সবার কাছে তিনি পরিচিত স্ট্রিট ম্যাজিশিয়ান হিসেবে। খুব কাছ থেকে জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন মানুষকে। কঠিন অবস্থায় তার টিকে থাকার অসাধারণ দক্ষতা হতবাক করে দিয়েছে এসময়ের সবাইকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত জাদুটি হলো ফ্রোজেন অব টাইম। এত দেখা যায় বরফের ভিতর ডেভিড প্রবেশ করে ৬৩ ঘণ্টা থেকে চমকে দেন সবাইকে। এটা ছিল একটি বিশ্বরেকর্ড। ডেভিডের বাবা ছিলেন একজন স্প্যানিশ এবং মা রাশিয়ান বংশোদ্ভূত একজন ইহুদি। তার ৪ বছর বয়সে বাবা হারিয়ে যান। তার মা ছিলেন একজন জিপসি, জাদু চর্চা করতেন। তিনি উঁচুমানের সহিষ্ণু কসরতদার হিসেবে গোটাবিশ্বে প্রসিদ্ধ এবং অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ব রেকর্ড ভাঙেন ডেবিড ব্লেইন।

বিশেষ দুঃসাহসিক কাজগুলোর মধ্যে আছে গস্ট্রিট ম্যাজিক ও ম্যাজিক ম্যান, ফ্রোজেন ইন টাইম, ভার্টিগো, ডাইভ অব ডেথ ইত্যাদি। ৯০ দশকের শেষের দিকে এসে ডেভিড ব্লেইন বিখ্যাত হন। 

স্ট্রিট ম্যাজিক নামে তার টেলিভিশন শো গোটা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরপরই ব্লেইনের জীবন কাহিনী নিয়ে বড় পর্দায় কাজ করে রবার্ট ডি নিরোর প্রোডাকশন কোম্পানি ট্রাইবেকা।

নদীর ওপর হাঁটেন স্টিভেন

পুরু নাম স্টিভেন ফ্রেনি ডায়নামো। যিনি জাদুবিদ্যায় নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্যমাত্রায়। পুরো নাম স্টিভেন ফ্রেনি। তবে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি ডায়নামো নামে পরিচিত। তার ছোটবেলা থেকে  বেড়ে ওঠার স্থানটি ব্রাডফোর্ডের ডেলফহিল এবং হোল্মি উড এস্টেস। পাহাড়-পর্বত আর বনের রহস্য মায়াজাল স্টিভেনকে এক রহস্যময় মানুষে পরিণত করেছে। জাদু শিখতে ভ্রমণ করেছেন মার্কিন মুল্লুকের নিউ ওরলিয়ন্স ও লুইজিয়ানায়। আর জাদুবিদ্যার এ পীঠস্থানেই নিজেকে একজন পরিণত জাদুশিল্পী বানিয়েছেন। আর নিজের কাজকে বহুমাত্রিকতা দিতে শিখেছেন নৃত্যের কলাকৌশল। তার নৃত্যে যোগ হয়েছে আধুনিকতম সংস্করণ হিপ হপ। একজন পেশাদার জাদুশিল্পী হিসেবে মঞ্চে পরিবেশন শুরু করেন ২০০২ সাল থেকে। ডায়নামোর টেলিভিশনে অভিষেক চ্যানেল ফোরের স্পেশাল আয়োজন ‘ডায়নামোস স্টেট অব মাইন্ড’ অনুষ্ঠানে। ২০১১ সালের ২৫ জুন তিনি একই সঙ্গে স্থিরচিত্র এবং ভিডিওটেপ প্রকাশ করেন যেখানে তাকে টেমস নদীর ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। তিনি ২০১১ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ব জাদুশিল্পীদের সংগঠন ম্যাজিক সারকেলে  যোগদান করেন। ডায়নামো বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনামূল্যে জাদু পরিবেশন করে তহবিল গঠনে সাহায্য করে থাকেন।

[ess_post share_type=”text”]